Posts

কোরেন্টিন ডে'জ

Image
।। শরীফ আহমদ ।।    "কোরেন্টিন ডেজ - প্রিলিউড'          সপ্তাহ খানেক আগেই টিকিট করে রেখেছিলাম। কিন্তু যে হারে রোজ রোজ নন-মেট্রো শহরে যাওয়া ফ্লাইটগুলো বাতিল হচ্ছিল তাতে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কখন যে আমার ফ্লাইট বাতিল হয় আর এরপর কী করব ভাবতে ভাবতেই এয়ারলাইন্সের নোটিফিকেশন এলো। না, কেন্সেল নয় টাইম টেবল বদলে দিয়েছে বেটারা। তিরিশ চল্লিশ পার্সেন্টের বেশি ফ্লাইট চলছে না তাই এই এডজাস্টমেন্ট মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই।           সকাল পাঁচটায় উঠে কলকাতা হয়ে এক‌ই ফ্লাইটে গন্তব্যে পৌঁছার কথা ছিল দশটায় এখন দেখছি সেই থ্রু ফ্লাইট আর নেই। এবার বিকেল সাতটায় বসে সাড়ে নয়টায় হায়দরাবাদ এয়ারপোর্ট আর সারা রাত মোট আট ঘন্টা দীর্ঘ লে-অভার কাটিয়ে পরের দিন সকাল পাঁচটার ফ্লাইটে যেতে হবে। বলা নেই কওয়া নেই, নতুন টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছে এয়ারলাইন্স। আগের দিন সন্ধ্যায় যাত্রা শুরু করে গন্তব্য এয়ারপোর্টে পৌঁছার রাইট টাইম পরের দিন সকাল আটটা, তাও সময়মতো পৌঁছলে। এখন এক ফ্লাইটের জায়গায় দুটো ফ্লাইটে চড়ে সারারাত এক অপরিচিত এয়ারপোর্টে কাটিয়ে পরের দিন আটটায় গন্তব্যে পৌছব বা পৌঁছার সম্ভাবনা নিয

সাবরমতি টু মথুরা

Image
সাবরমতি টু মথুরা : ১ এটি আহমেদাবাদের সাত সকালের আকাশ। লম্বা উইকেন্ড আসায় বেরিয়ে পড়লাম। লক্ষ্য প্রায় নেই বললেই চলে। আপাততো মথুরা যাচ্ছি। হ্যাঁ, উত্তর প্রদেশ। বাবার এক পুরনো বন্ধু থাকেন। বাবা থাকাকালীন ২০০৬ থেকে ২০১০ অবধি আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন। ধীরে ধীরে খুব কাছের মানুষ হয়ে গেছেন। অনেক বার ওদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য খুব পীড়াপীড়ি করেছেন। যাওয়া হয়নি। কয়েকদিন আগে ফোন হাতড়ে নম্বর পেয়ে গেলাম। আঙ্কেল সেনায় চাকরি করেন। শুনলাম দশেরার আগে‌ বাড়ি আসছেন।‌ আর এই সোমবার কলম্বা স ডে উপলক্ষে অফিস বন্ধ। শনি থেকে সোম তিন দিন ছুটি। ভাবলাম আঙ্কেল আন্টির সঙ্গে দেখা করে আসি। ভাবা মাত্র‌ই কাজ। আহমেদাবাদ থেকে দিল্লি গো এয়ার আর নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে মথুরা জংশনের টিকিট কেটে নিলাম। এখন টেক্সিতে বসে এয়ারপোর্ট যাচ্ছি। সাবরমতি রিভারফ্রন্ট হয়ে উবের ড্রাইভার উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। শীতের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। উজ্জ্বল রোদ ধেয়ে আসছে কিন্তু একটু আধটু কুয়াশা এখন‌ও টিকে থাকতে চাইছে। সাবরমতী টু মথুরা : ২   এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে মেট্রোয় চললাম যাতে‌ তাড়াতাড়ি

এক মুঠো ভাত

Image
১. খালেক মিয়া এবার বর্ষা শুরু হতেই দুটো বলদ কিনে ফেললেন।‌ ছেলে বড় হয়েছে তাই এখন আর চিন্তা নেই। এবার সাত বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছেন। নিজের জমি বলতে এক চিলতে বাড়ির মাটি আর ছোট্ট একটি পুকুর ছাড়া মা-বাপ কিছুই রেখে যাননি। তাই অন্যের জায়গা বন্ধক নিয়ে চাষ করেই পেট পালতে হয়। প্রকৃতি উদার থাকলে চাষ ভালো হয় আর মোটামুটি বছর চলে যায়। কিন্তু ধান কম ধরলে মজুরি করে কোনোমতে দিন গুজরান করতে করতেই বছর শেষ হয়। শুরু হয় পরের বছরের জন্য পরিকল্পনা আর স্বপ্ন দেখা। সেই বাইশ বছর বয়স থেকে খালেক মিয়া চাষবাসের উপর ভর করেই ব‌উ আর এক ছেলের ভরণপোষণ করে যাচ্ছেন। ছেলেটা বড়ো হয়ে আসছে। দু'বছর পর মেট্রিক দেবে। কিন্তু খালেক মিয়ার ইচ্ছে ওকে চাষবাসের কাজে ঢুকিয়ে দিতে। পড়াশোনা করে কি আর হবে। এর থেকে সময় থাকতে শিখে নিক। অন্তত ভিক্ষা করতে হবে না। এবার আর হালিচারা করা গেল না। তাই কিনে এনে রোপণ করা ছাড়া উপায় নেই। পাশের বাড়ির আকরাম আলীর সঙ্গে চারার ব্যাপারে কথা হয়ে গেছে। এবার বন্যা নাহলেই হয়। খালেক মিয়া মিষ্টি কুমড়োর তরকারি আর পাঞ্জাব চালের ভাত খেয়ে সাদেকের মার পাশে শুয়ে পড়ে কিন্তু ঘুম আসে ন

"তিতির"

Image
উহ কি ঠাণ্ডা! এবার শীত আগেই এসে গেছে। শরৎ কালে এমন শীত ভাবা যায় না! তিতির এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন? রাঘব কি পানের সঙ্গে কোনো নেশার জিনিস মিলিয়ে দিয়েছিল? না তিতির গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল? মনে পড়ছেনা। আজ খুব ধকল গেছে। সম্ভবত তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। রাঘব গাড়িতেই একটু আধটু আদর করতে চাইছিল। কিন্তু খারাপ রাস্তা আর সামনে থেকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধেয়ে আসা ট্রাক বাধ সাধল। এরপর আর কিচ্ছু মনে নেই। তিতির এসব ভাবতে ভাবতে গেঁয়ো পথ দিয়ে এগিয়ে চলছে। নবমীর রাত। চাঁদের আলোয় নেয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। তিতির ওর বন্ধু রাঘবের সাথে পূজো দেখতে গিয়েছিল করিমগঞ্জে। তিতিরের মা রাঘবের সাথে মেয়েকে বাইরে যেতে দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু মেয়ের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত মানলেন। যাওয়ায় আগে বারবার বলে দিলেন যেন রাত নটার আগেই ফিরে আসে তিতির। সুপ্রাকান্দি থেকে করিমগঞ্জ মাত্র দশ কিলোমিটার। এই রাঘব একটা গাধা। প্রমিস করেছিল দশটার আগেই গাড়িতে করে এনে নামিয়ে দিয়ে যাবে। কিন্তু এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি করে আর পূজোর মণ্ডপ দেখতে দেখতে দেরি হয়ে গেল। আহার রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার আর শেষমেষ সুযোগ পেয়েই তিতিরের ঠোঁটে এক সা

আসামের বাঙালি মুসলিমদের প্রতি আবেদন

Image
অনেক হলো। এখন আর প্রতিহিংসা ছাড়ুন। জানি একসময় দাঁড়ি টুপি থাকলেই একাংশ হিন্দু তাচ্ছিল্য করে আমাকে আপনাকে বাংলাদেশী বলতো, বাঙ্গাল বলে বিদ্রুপ করত। আমার‌ও খারাপ লাগতো। কিন্তু এখন এদের বেশিরভাগ বোঝতে পারছেন কোথায় ভুল হয়েছে। ত্রিশ লাখ হিন্দু বাঙ্গালীর নাম নাগরিক পঞ্জিতে উঠেনি এটাই চোখ খুলে দিয়েছে অন্ধ আর অর্ধ অন্ধদের। যারা একসময় চুপ থাকত আজ তারাও চাইছে ভেদ বিভেদ ভুলে বরাকের বাঙালি এক হোক। মুসলমানদের বৃহদাংশের নাম এনার্সিতে এসেছে এনিয়ে চারমাস আহ্লাদ করেছেন। আমিও করেছি। আর মানায় না। শীঘ্রই অসমিয়ারা অবজেকশন করা চালু করে দেবে তাই যাদের নাম উঠেছে তাদের নাম কেঁটে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আজ যাঁরা কাঁদছে তাদের মতো আমাদেরকেও হয়তো কাল কাঁদতে হবে তাই জাগুন। মনে রাখবেন অসমের জাতীয়তাবাদী সংঘটন এমনকি হিন্দি বলয়ের দ্বারা পরিচালিত হিন্দুত্ববাদীদের টার্গেট বাঙালি হিন্দু আর সংখ্যালঘু মুসলমান উভয়েই। প্রতিবেশীর প্রতি মুসলমানদের হক্ব আছে এটা ভুলে গেলে চলবে না। এনার্সির জন্য‌ই ৩১ জন প্রাণ দিয়েছেন। আজ আরেকজনের আত্মহত্যা সংখ্যাকে ৩২ এ পৌঁছে দিল। কি ভয়ানক কিন্তু আমরা কি করছি? এর দায়িত্ব আম

বাঙলা অসমীয়া

Image
কয়েক মাস আগের কথা। ইউনিয়ন ব্যাংকের কুরোবাহা (বরপেটা, অসম) শাখায় গেছি একটা চেক জমা দিতে। কাউন্টারের আগে চার পাঁচজনের লাইন। বসে থাকা কেরানির সঙ্গে কেউ অসমীয়া কেউ হিন্দি বলে যাচ্ছেন। কেরানি হিন্দিতেই কথা বলছেন। নিশ্চয়ই বাইরের লোক। কথাবার্তার ধরন দেখে মনে হলো সম্ভবত উড়িয়া হবে। আমার পালা আসতেই আমি বাঙলায় কথা বলা শুরু করলাম। কি আশ্চর্য, লোকটা খুব ভালো বাঙলা বলে গেল। ভুবনেশ্বরে বাড়ি কিন্ত কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করেছেন। লাইনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমীয়ারা আমাকে মিঞা ভেবে বিরক্ত হচ্ছিলেন সম্ভবত। আমি ইচ্ছে করেই আলোচনা দীর্ঘ করে ওদের আরও খানিকটা বিরক্ত করে চলে এলাম। ইংরেজি বললে হয়তো ওদের চোখমুখ চকচক করে উঠত, আমাকে স্মার্ট ভাবত, আর বাঙলা বললেই যন্ত্রণা?

ইলহান ওমর আর রাশিদা তালিব হোক অভিবাসীদের দিশারী

Image
কেউ যেন বলেছিল সারা পৃথিবীর কান্না একদিকে আর স্বজনহারা ভিটেহীন উদ্বাস্তুদের কান্না যদি একদিকে রাখা হয় তবে উদ্বাস্তুদের পাল্লাই ভারি হবে। সভ্যতার সূচনা থেকেই দেখা যায় প্রতিপত্তি আর পার্থিব বাহুল্য খুব কম সংখ্যক মানুষের হাতে থাকে। অন্যদিকে দুবেলা খাবার জুটেনা যাদের তাদের সংখ্যাই সর্বাধিক যা স্থান কাল ভেদে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ হতেও দেখা গেছে। খালি রাজনৈতিক বললে ভুল হবে বরং পুঁজিবাদীর চক্রান্তেই গরীব আর‌ও গরীব হয়, আর ধনীর ভুঁড়ি আকাশ ছুঁয়ে যায়। যখন‌ই পুঁজিবাদের সঙ্গে দালাল শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা বা দল মিশে যায় তখন আসে সমুহ বিপদ। জাতী, গোত্র থেকে শুরু করে এক একটি দেশ ধ্বংস হয়ে যায়। অনাথ বাস্তুহারার সংখ্যা বাড়ে। নিজের জন্মস্থান ছেড়ে বেরিয়ে যায় অজানার উদ্দেশ্যে। এই যাত্রা কখনও মৃত্যুর পর শেষ হয় আর কখনও কিঞ্চিত হলেও কোথাও না কোথাও জ্বলে ওঠে আশার আলো। উদ্বাস্তু আর অবৈধ অভিবাসীর এই গেইম প্লান নতুন কিছু নয়। চলছে সর্বত্র। আসাম থেকে ঝাড়খণ্ড, আফগানিস্তান থেকে সিরিয়া আর শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে মেক্সিকো পর্যন্ত এক‌ই চক্রান্ত। এই ভারি পাল্লার অশ্রু আর রক্তপাতের পেছনে পুঁজিবাদ আর আগ্র