আসামের বাঙালি মুসলিমদের প্রতি আবেদন
অনেক হলো। এখন আর প্রতিহিংসা ছাড়ুন। জানি একসময় দাঁড়ি টুপি থাকলেই একাংশ হিন্দু তাচ্ছিল্য করে আমাকে আপনাকে বাংলাদেশী বলতো, বাঙ্গাল বলে বিদ্রুপ করত। আমারও খারাপ লাগতো। কিন্তু এখন এদের বেশিরভাগ বোঝতে পারছেন কোথায় ভুল হয়েছে। ত্রিশ লাখ হিন্দু বাঙ্গালীর নাম নাগরিক পঞ্জিতে উঠেনি এটাই চোখ খুলে দিয়েছে অন্ধ আর অর্ধ অন্ধদের। যারা একসময় চুপ থাকত আজ তারাও চাইছে ভেদ বিভেদ ভুলে বরাকের বাঙালি এক হোক। মুসলমানদের বৃহদাংশের নাম এনার্সিতে এসেছে এনিয়ে চারমাস আহ্লাদ করেছেন। আমিও করেছি। আর মানায় না। শীঘ্রই অসমিয়ারা অবজেকশন করা চালু করে দেবে তাই যাদের নাম উঠেছে তাদের নাম কেঁটে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আজ যাঁরা কাঁদছে তাদের মতো আমাদেরকেও হয়তো কাল কাঁদতে হবে তাই জাগুন। মনে রাখবেন অসমের জাতীয়তাবাদী সংঘটন এমনকি হিন্দি বলয়ের দ্বারা পরিচালিত হিন্দুত্ববাদীদের টার্গেট বাঙালি হিন্দু আর সংখ্যালঘু মুসলমান উভয়েই।
প্রতিবেশীর প্রতি মুসলমানদের হক্ব আছে এটা ভুলে গেলে চলবে না। এনার্সির জন্যই ৩১ জন প্রাণ দিয়েছেন। আজ আরেকজনের আত্মহত্যা সংখ্যাকে ৩২ এ পৌঁছে দিল। কি ভয়ানক কিন্তু আমরা কি করছি? এর দায়িত্ব আমরা এড়াতে পারিনা। প্রথম দিন থেকেই আমাদের হিন্দু ভাইদের জন্য মাঠে নামার প্রয়োজন ছিল। বিপদে পড়লে জাতি ধর্ম না দেখে সাহায্য করা আমাদের ইসলামই শিখিয়েছে। কি করে ভুলে যাচ্ছেন? তাই মানুষ মানুষের জন্য এটা না ভুলে এখন থেকেই মাঠে নামতে হবে। নইলে চল্লিশ লাখ এক কোটিতে পৌঁছবে আর লাশের সংখ্যা বত্রিশ থেকে শুরু করে কোথায় পৌঁছবে কেউ জানে না।
আমাদের রাজ্যে অসমিয়া থেকে বাঙালির সংখ্যা বেশি। বাঙালি যদি মিলেমিশে থাকত তবে রাজপাট সব বাঙালিদের হাতে থাকত। কিন্তু আমরা হিন্দু মুসলমানেই থেকে গেলাম। বিভাজন করা এক রাষ্ট্রীয় চক্রান্ত আর এর শিকার আমরা এটা যদি এখনও বোঝা যায়না তবে আর কি হবে। গেরুয়া দলগুলো একমাত্র ভোটের জন্য যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে মনে হয় আগামীতে আসামের বাঙালিদের কপালে আরও খারাপ সময় আসছে। আরেকটি নেলি যে হয়ে যাবে না তার গ্যারান্টি নেই। উলফা, সালফারা অপেন চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হলে হিন্দু মুসলমান এক হয়ে যেতে হবে। লক্ষ্য করে দেখুন এজিপি হোক বা কংগ্রেস কারুর স্ট্যান্ড ক্লিয়ার নয়। তাই আমাদেরকেই উঠে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া উপায় নেই।
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে চাইছে কিন্তু এখানকার স্বার্থান্বেষীরা সেটা চায়না। হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তি ও সংগঠনরা হিন্দি বলয়ের মগজধোলাইর শিকার। এরা কোনদিনই বাঙালিকে এক হতে দেয়না। আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন রেখেই এরা আমাদের উপর ছড়ি ঘোরাতে চায়। অতএব এখন থেকে আগত দিনের বিপদের আঁচ করুন আর এনার্সির যাচ্ছেতাই নীতির বিরুদ্ধে এক হয়ে যান। এরপরও এখানকার কুলাঙ্গাররা শিলচরে হোক বা করিমগঞ্জে বাঙাল বলে যদি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনায় অপমান করে বা লাভ জিহাদের বাহানা করে এখানে ওখানে দাদাগিরি করে তবে হিন্দু মুসলমান মিলে জুতোপেটা করুন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনুন। ফলোআপ রাখুন যাতে পুলিশ তাদের প্রতি নরম ভাব না বর্তায়। ফেইসবুকে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই মামলা করুন। একাধিক মামলা। খালি ফেইসবুকে প্রতিবাদ করলে কিচ্ছু হবে না। আর আবেগে ভেসে না গিয়ে একটা জিনিষ মাথায় ফিট করে নিন – সব হিন্দু এরকম নয়। মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু হলে অনেক হিন্দু আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন আমাদের মহানতার পরিচয় দিতে হবে। বিভাজন কারিরা চায়না আমরা এক হই। ওদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে হবে। টয়লেট পেপারের চামড়া বেঁচে দেওয়া বুদ্ধিজীবীরা উল্টো পাল্টা লিখে আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবে কিন্তু আর বেকুব হলে চলবেনা। পৃথক বরাক হলেও আপত্তি নেই। তবে পৃথক রাজ্য হোক। হিন্দু মুসলমানের মিলন ভূমি হোক এই বরাক।
আসুন, রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে জাতিকে বাঁচান।
Comments
Post a Comment