বাইশটি ভাষার পণ্ডিত ড° মহম্মদ শ্বহীদুল্লাহের বিষয়ে...


প্ৰখ্যাত শিক্ষাবিদ,ভাষাবিদ,লেখক,কবি, অনুবাদক, পণ্ডিত ড° মুহাম্মাদ শ্বহীদুল্লাহের জন্ম হয় ১৮৮৫ সালে । জ্ঞানতাপস তথা চলমান বিশ্বকোষ হিচাবে সুপরিচিত ড° শ্বহীদুল্লাহ সংস্কৃতে অনার্স সহ স্নাতক ডিগ্ৰী লাভ করার পর‌ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষকরা স্নাতকোত্তর শ্ৰেণীতে ওনাকে পড়ানোর জন্য অস্বীকার করায়‌ শেষপর্যন্ত তুলনামূলক দৰ্শন তত্ব বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্ৰী অৰ্জন করেছিলেন ।
উল্লেখ্য যে তিনি যেকোনো পরীক্ষায় সংস্কৃত ভাষা বা সাহিত্যে সবসময়ই সৰ্বোচ্চ নম্বর লাভ করতেন । পরবর্তী কালে মহম্মদ শহীদুল্লাহ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সারবন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্ৰী লাভ করেন । ঐ ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা প্রথম মুসলমান ব‍্যক্তি ছিলেন মহম্মদ শহীদুল্লাহ। এরপর তিনি আইনের ডিগ্রিও উপার্জন করেন। ড° মুহাম্মাদ শ্বহীদুল্লাহ বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিচাবে প্ৰায় ত্রিশ বছর সেবা করে গেছেন। কয়েক বছর তিনি ওকালতিও করেছেন।
জ্ঞানতাপস ড° মুহাম্মাদ শ্বহীদুল্লাহ আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি, ফরাসি, পুস্ত, জার্মান, উড়িয়া ইত‍্যাদি ২২ টি ভাষা আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিকদের মতে উনি এর থেকেও বেশি ভাষা জানতেন। এতো ভাষা আর জ্ঞানের অধিকারী হয়েও মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন খুব বিনয়ী। বলতেন, 'আমিতো কেবল বাংলা ভাষাই জানি'।
বাংলা সাহিত্যে মহম্মদ শহীদুল্লাহর অসাধারণ পান্ডিত্যের কথা সৰ্বজনবিদিত । চৰ্যাপদ নিয়ে ড° মহম্মদ শ্বহীদুল্লাহর লিখে যাওয়া ব‌ই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আধুনিক ভারতীয় ভাষার ছাত্ৰ-ছাত্ৰীদেরকে আজও পড়তে হয়। তিনি আশির‌ও বেশি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনার করা ছাড়াও বিশের থেকে বেশী গ্রন্থ অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন। একাধিক ভাষার অভিধান‌ও সংকলন করেছিলেন তিনি। ইসলাম ধর্মের প্রতি ছিল মহম্মদ শহীদুল্লাহর অগাধ শ্রদ্ধা। ওনার ধার্মিক জ্ঞান‌ও ছিল অসাধারণ।
ডঃ মহম্মদ শহীদুল্লাহর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো --(১) বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত, (২) বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, (৩) Tales from the Quran, (৪) Essays on Islam, (৫) মহানবী (ছ:), (৬) বিদ্যাপতি শতক, (৭) রুবাইয়্যাত-এ-উমর খায়য়াম, (৮) দিওআনে হাফিজ ইত্যাদি ।
বৃটিশ ব্ৰডকাষ্টিঙ কর্পোরেশনের বাংলা বিভাগ একবার এক সমীক্ষায় সৰ্বকালের সৰ্বশ্ৰেষ্ঠ বঙালী হিসাবে ড° মুহাম্মাদ শ্বহীদুল্লাহকে ষষ্ঠদশ স্থান দেয় । মৃত্যুর আগমুহূৰ্ত পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত কৰ্মঠ ছিলেন আর বিভিন্ন অনুষ্ঠান-প্ৰতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন । ১৯৬৯ খ্রীষ্টাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন
ড° মুহাম্মাদ শ্বহীদুল্লাহর বিদেহী আত্মার প্রতি র‌ইল শ্রদ্ধা আর সদগতির জন্য প্রার্থনা।
(উপরের অংশ মুল লেখক Nurul Haque ভাইর অসমিয়া লেখা থেকে অনুদিত...)
উইকিপিডিয়া থেকে সংযোজন:
ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা
বহু ভাষাবিদ, পণ্ডিত ও প্রাচ্যে অন্যতম সেরা ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান। জাতিসত্তা সম্পর্কে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র স্মরণীয় উক্তি ছিল
আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালি।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে যে ক’জন ব্যক্তি জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর এই ভূমিকার ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানিই প্রশস্ত হয়।
পুরস্কার
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়। ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ তাঁকে ‘বিদ্যাবাচস্পতি’ উপাধিতে ভূষিত করে। পাকিস্তান আমলে তাকে ‘প্রাইড অফ পারফরমেন্স পদক’ ও মরণোত্তর হিলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব প্রদান করা হয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স তাঁকে সম্মানিত সদস্য (ফেলো) রূপে মনোনয়ন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে মরণোত্তর ‘ডি লিট’ উপাধি দেয়। ১৯৮০ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।
মৃত্যু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সমাধি
১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তাঁর অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ঐ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। এছাড়াও তাঁর নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলা ভবনের নামকরণ করা হয়।

Comments

Popular posts from this blog

দেশ বিদেশের গল্প

বাঙলা অসমীয়া

সাবরমতি টু মথুরা