স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা



কাল রাত ভালো করে ঘুম হয় নি। পাশের ফ্ল্যাটে কেন জানি খুব হই হুল্লুড় চলছিল। এই ফ্লোরে একটিই পাকিস্তানী পরিবার। নিশ্চয় পার্টি সার্টি ছিল। রাতভর লাউড স্পিকারে গানের আওয়াজ আসছিলো। সকালে কলিং বেলের কর্কশ শব্দে প্রথমে কান চাপা দিলেও শেষমেশ উঠতে হলো। জ্বালা করা চোখে দরজা খুলে দেখি পাশের ফ্ল্যাটের দুটো ছেলে আর একটি মেয়ে এক থালা মিষ্টান্ন আর শরবত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিরক্তি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা হয়তো সফল হয়নি।‌ ওরা খানিকটা অপরাধীর মতো বলতে লাগলো - আপনাকে এই সময়ে উত্যক্ত করার জন্য সত্যিই দুঃখিত। আপনাকে হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। গতকাল ছিল আমাদের স্বাধীনতা দিবস। তাই রাত্রে আমাদের ঘরে পার্টি ছিল। আপনি আসবেননা ভেবে ডাকিনি। এই মিষ্টি আর শরবত করাচি থেকে আমাদের পরিবারের লোকজন পাঠিয়ে দিয়েছেন। আপনার জন্য সামান্য রেখে দিয়েছিলাম।‌ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে নিয়ে এলাম। নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবে। এই বলে মিষ্টির থালা নামিয়ে রেখে ওরা চলে গেলো। ভাবলাম এদের আর আমাদের মধ্যে কই আর তফাৎ। এক সময় তো একই দেশ ছিল। ক্ষমতা লোভীদের কলমের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে এক সময়ের একক স্বপ্ন। কতনা রক্ত ঝরেছে। অখন্ড দেশের আজ তিন টুকরো আর কেউই সুখী নয়।
মোবাইল অন করতেই শুরু হয়ে গেল ম‍্যাসেজের পর ম‍্যাসেজ। তিরঙ্গা, স‍্যারে যাহা সে আচ্ছা, আরও কত সুন্দর সুন্দর শুভেচ্ছা বিনিময়ের হোয়াটসঅ্যাপ। দেশের কথা ভাবলে আর রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত শুনলেই আমার চোখ ছলছল করে ওঠে। বাথরুমে যাবো ভাবতেই নিউজ অ‍্যাপ থেকে একটি খবর ট‍্যাবলেটের স্ক্রীনে ফুটে উঠল - ৭২ তম স্বাধীনতা দিবসে ভারতের মুদ্রা ডলারের মোকাবেলায় রেকর্ড নিচে। ট‍্যাব বিছানায় ছুড়ে ফেলে বাথরুমে ঢুকলাম। অফিস যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

Comments

Popular posts from this blog

দেশ বিদেশের গল্প

বাঙলা অসমীয়া

সাবরমতি টু মথুরা